শিরোনাম :

খুলনায় শ্মশানঘাটের বাটকেমারি খাল ভরাট করে চলছে আবাসন প্রকল্প


৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ৮:৪২ : অপরাহ্ণ

সরকারি হিসাবে খুলনা জেলায় ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার সরকারি খাল রয়েছে। অনুসন্ধান বলছে, এরমধ্যে ৫৬০ কিলোমিটার বা প্রায় ২৫ শতাংশ ভরাট হয়ে বেদখল হয়ে গেছে। নির্মাণ করা হয়েছে নানা স্থাপনা। আর সরকারি এসব খাল ও জমি দখলের মূল অভিযোগটা স্থানীয় প্রভাবশালী ও সরকার দলের কতিপয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহর ও শহরতলীর সরকারি এসব খাল দখলে নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। গ্রামপর্যায়ে সরকারি খাল দখল অথবা ইজারা নিয়ে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করে মাছচাষ করছেন প্রভাবশালীরা। খুলনা নগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার এরকম প্রায় ৫০টি খালের মধ্যে অনেক খালেরই এখন অস্তিত্ব নেই। আর যা আছে তার ৮০-৯০ শতাংশ অবৈধ দখলে। এতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের পথ। নষ্ট হচ্ছে পানির আধার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যা প্রকৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর ভবিষ্যতের প্রকৃতিতে ডেকে আনছে চরম বিপর্যয়।
খুলনা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় ২২শত কিলোমিটারের মত সরকারি খাল রয়েছে যারমধ্যে ৫৬০ কিলোমিটার খাল ভরাট হয়ে বেদখল হয়েছে। এসকল খাল উদ্ধার করে খনন করে জলাধার সৃষ্টি করলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, মাছচাষে আগ্রহী ও চাষের উপযোগী রাখতে প্রকল্পের আওতায় মৎস্যবিভাগ প্রতিবছর কিছু খাল খনন করে। তবে কী পরিমাণ খাল অস্তিত্ব হারিয়েছে বা বেদখল আছে তার কোন পরিসংখ্যান তার দপ্তরে নেই।
খুলনা জেলার শহরসংলগ্ন উপজেলা ডুমুরিয়ার গুটুদিয়ার বাসিন্দা ময়জুদ্দিন শেখ বলেন, মোস্তফার মোড়-কৈয়া বাজার সড়কের রাজবাঁধে খালের মুখ বন্ধ করে আবাসন ব্যবসা গড়ে তুলেছে বিশ্বাস প্রোপার্টিজ নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান। এতে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন পথ সংকুচিত এবং বন্ধ হয়ে গেছে। ওই আবাসন ব্যবসায়ীরা এখন গুটুদিয়া ইউনিয়নের চক আসানখালী মৌজার জেএল নং ৫৬ বর্তমান জেএল ৫৮ এর ১৩ খতিয়ানের বর্তমান আর এস দাগ নং ২১৫০/২১৫১ এর ১০৫ শতক সংখ্যালঘুর কৃষিজমি ভরাটের সাথে শ্মশানঘাট মসজিদের পাশের বাটকেমারি খাল দখল করে বালু ভরাট করে খালটির অস্তিত বিলিন করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আবাসন প্রতিষ্ঠানটির মালিক আজগর বিশ্বাস তারার ফোনে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে সংখ্যালঘুর জমি কবলামুলে ক্রয়কারী খাঁন মোঃ মাসুম বলেন, চক আসানখালী মৌজার জেএল নং ৫৬ বর্তমান জেএল ৫৮ এর খতিয়ান ১৩ খতিয়ানের বর্তমান আর এস দাগ নং ২১৫০/২১৫১ এর ১০৫ শতক জমির মুল মালিক চিতরঞ্জন দস কুড়ি,চিন্ময় দাস কুড়ি,অমুল্য দাস কুড়ি। এই তিন ভাইয়ের মধ্য থেকে দুই ভাইর অংশ কাষ্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মুনসুর আলী ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম ২০০৬ সালে কবলামুলে ক্রয় করেন । এখানে উল্লেখ যে তিন ভাইর অংশ ভিতর অমুল্যকে নিংশসন্তান দেখিয়ে মুনসুর এবং জাহানারা বেগম তিনটি জাল দলিল সম্পাদন করেন । কিন্তু অমুল্য মৃত্যুকালে একটি পুত্র সন্তান রেখে যান তার নাম অনিমেষ কুমার কুড়ি । পরবর্তীতে অনিমেষ কুমার মৃত্যু বরন করলে তার উত্তরসুরি তিপ্তি দাস কুড়ি,অন্তরা দাস কুড়ি বিগত ২৬/৮/২১ ইং তারিখ খাঁন মোঃ মাসুম হোসেন,শেখ ফারুখ হোসেন,শেখ ফেরদৌস হোসেন ফিরোজ কবলা মুলে ক্রয় করেন । জমিটি জাল কবলায় সম্পাদন হওয়ায় বিষটি জনাজানি হলে মুনসুর ও জাহানারা দম্পত্তির ১০৫ শতক জমি হাতছাড় না হওয়া ভয়ে জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা বিশ^াস প্রপাট্রিজের মালিক আজগর বিশ্বাস তারার কাছে মৌখিখ ভাবে দিয়ে দেন । সেই প্রেক্ষিতে তারা বিশ^াস প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষিজমি ভালু ভরাট করেন এবং পাশে থাকা প্রবাহমান বাটকেমারি খালটি সম্পুর্ণ ভরাট করে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের রাস্তা নির্মান করছে ।
গুটুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম তুহিন বলেন, শহরের পার্শ্ববর্তি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সরকারি খাল-জলাশয় ভরাটের ঘটনা ঘটছে ডুমুরিয়া উপজেলায়। এ উপজেলার সরকারি খাল দখল, গাছপালা উজাড় করে ইচ্ছামতো রাস্তা, পুল-কালভার্টসহ নানা স্থাপনা তৈরি করছে কতিপয় আবাসন ব্যবসায়ী। ভূমি অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তার সহযোগিতায় খাল-জলাশয় টার্গেট করে ভূমিহীন সেজে অনেকেই বরাদ্দ নিয়ে বেআইনীভাবে তা বিক্রি করছেন আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে। তুহিন বলেন, ওইসব আবাসন ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো আইন মানেন না। আর আমাদেরও কিছু করার থাকে না।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসার শেখ নুরুল আলম বলেন, অভিযোগ পেলে সরকারি খাল ও জলাশয় ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, সরকারি খাল ও জলাশয় ভরাট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এ কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আরো সংবাদ