শিরোনাম :

খুলনায় ক্রমাগত হারে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম


১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:৪৬ : অপরাহ্ণ

বাজারে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো দফায় দফায় বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এরমধ্যে ভালো খাবার তো এখন নাগালের বাইরে। অবস্থা এমন যে, মাছ-মাংস ছুঁয়ে দেখতে পারছেন না মধ্য ও নিম্নবিত্তরা। এসবের বাইরে সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। আর চিনি, আটা, ময়দা বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। ভোটের পর থেকেই খুলনায় ক্রমাগত হারে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম। সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে সব ধরনের ডাল, মসলা, আটা-ময়দা, ডিম, চিনিসহ বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যের দাম। মাছ-গোশতের বাজারে যেন আগুন। ছোট তরকারিতে খাওয়ার গুরা চিংড়ি প্রতি কেজি ছয়শ টাকার উপরে। অস্বাভাবিক দামে পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাতে অধিকাংশ মানুষের হিমশিম অবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদষ সংসদ নির্বাচনের পর হতেই বেড়ে চলেছে সব ধরনের চালের দাম। খুলনার পাইকারী বড় বাজারে সিদ্ধ চাল সর্বনি¤œ মানের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৫শ টাকা এবং মাঝারি মানের সিদ্ধ চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ টাকা। মাঝারি মানের হাফ সিদ্ধ ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৯শ টাকা। মাঝারি মানের কাটারিভোগ আতপ চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৭শ ৫০ টাকা থেকে ৪২ শ টাকা পর্যন্ত। সর্বনিম্ন মানের ৫০ কেজির আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৫শ টাকা বস্তা।
নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোটের পর হতে গত ১২ দিনে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে মুগডালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা পর্যন্ত। গতকাল নগরীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায় যা ভোটের আগে ছিল ১৪৫ টাকা। খেসারি ডাল ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় যা ভোটের আগে ছিল ৯০ টাকা। প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০ টাকা, মটর ডাল ৭৪ টাকা এবং মসুর ডালের মধ্যে মোটা জাতের ১১০ টাকা এবং সরু জাতের দেশীয় মসুর ডাল ১৪৪ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম। শুক্রবার খুলনা বড় বাজারে প্রতি কেজি এলাচ মানভেদে ২৭ শ-৩২ শ টাকা, দারু চিনি-৪৮০ টাকা, গোলমরিচ আট শ টাকা, লবঙ্গ ১৭শ টাকা দরে বিক্রি হয়। বেড়েছে রসুনের দামও। শুক্রবার সকালে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছিল ২৪০ টাকা দরে। কয়েক দিনের ব্যবধানেই পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। ভরা মৌসুমেও কমছে না সবজির দাম। শুক্রবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ৫৫/৬০ টাকায়। সামান্য বেড়েছে চিনির দামও। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ছয় হাজার ৭৫০ টাকায় এবং খুচরায় কেজি প্রতি ১৩৭ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা ভোটের আগে ছিল কেজিপ্রতি ১৩৫ টাকা।
মাছ-গোশতের দিকে সাধারণ মানুষ তাকাতেও যেন হিমশিম খাচ্ছে। শুক্রবার খুলনার বাজারে গরুর গোশত কেজিপ্রতি হাড়সহ ৭৫০ টাকা দরে, খাসি-১১ শ টাকা দরে, প্রতি জোড়া কবুতর সাইজভেদে তিন শ-চার শ টাকা, দেশীয় জাতের মুরগি কেজিপ্রতি ৫৬০ টাকা, প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ২১০ /২০টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
মাছ সাধারণের একেবারেই নাগালের বাইরে। প্রকারভেদে সাধারণ চাষের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৫০-৭০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি পদের (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছগুলোর দাম বেড়েছে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। খালিশপুর পৌর সুপার মার্কেট বাজারে কথা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ আঃ হালিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের মতো হিসাব করে চলা মানুষ আর গরুর মাংস খেতে পারবে না। কমদামে ব্রয়লারও এখন কেনা যায় না। মাছের দামও বেড়েছে। আমরা এখন কী খাবো? তিনি বলেন, ইচ্ছে থাকলেও মাছ-মাংস সন্তানের মুখে দিতে পারছি না। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে। আমার জীবনে সব পণ্যের দাম একসঙ্গে এভাবে বেড়ে যাওয়া কখনো দেখিনি। এছাড়া ডিমের দামেও স্বস্তি নেই। প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম ১৫০ টাকা, সাদা ডিম-১৪০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ফলে সাধারণ মানুষের বাজারের হিসাব মিলাতে নাভিশ্বাস উঠছে।
মহানগরীর বেসরকারি এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য নিয়ে মানুষ যে কত কষ্টে আছে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ যেন বুঝার নেই। সব মানুষ এখন পুরনো সঞ্চয় ভেঙেই সংসার টানছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আরো সংবাদ