শিরোনাম :

খুলনার দৌলতপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ


৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ১:০৭ : অপরাহ্ণ

খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাসের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, রাজস্ব ফাঁকি, গাছের চারা বিক্রির টাকা হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির ফলে এই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন হর্টিকালচার সংশ্লিষ্ঠ স্থানীয়দের। তিনি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জুনে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প(ওয়াইআরএফপি) ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। টেন্ডার আহ্বান ও কোন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ না করে গোপনে নিয়ম বর্হিভুত ভাবে নিজস্ব ঠিকাদারের লাইসেন্সের নামে কাজ নিয়ে উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস নিজেই কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এমন কি তিনি নিয়মিত অফিস টাইমে অফিসে আসেন না। নিজের ইচ্ছামত অফিস করেন। সঞ্জয় কুমার দাস ২০২২ সালের ১লা সেপ্টেন্বও দৌলতপুর হর্টিকালচার সেন্টারে যোগদান করেন । তিনি যোগদানের পর দৌলতপুর হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মচারী ও শ্রমিকদের মনে করেন তার বাড়ির চাকর ।
অনুসন্ধানে জানা যায়,ভূমি উন্নয়নে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে ১৩ লক্ষ টাকা। সীমানা প্রাচীর ঊর্ধ্বমুখী করনে পাঁচ লক্ষ টাকা, অফিস ভবন মেরামতে ২ লক্ষ টাকা ও ভার্মি কম্পোস্ট সেট নির্মানে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৩ জুনের প্রকল্প খরচ হতে নির্মাণ ও পূর্ত খাতে ভূমি উন্নয়নে ১৩ লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। যেখানে বিভিন্ন ফলস ও বনজ চারা উৎপাদনে মাটির প্রয়োজন হয় সেখানে মাটি না এনে নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। লবণাক্ত বালু যা মানসম্মত চারা উৎপাদনে যতেষ্ট নয়।
মৃত্তিকা গবেষকরা জানান, লবনাক্ত বালিতে কোন চারা বা কলম উৎপাদন সম্ভব নয়। দৌলতপুর হর্টিকালচারের পাঁচটি পয়েন্টে ছোট বড় পাঁটবোট বালি ড্রেজারের মাধ্যমে ফেলা হয়েছে। সে হিসেবে ৫৫ হাজার ঘনফুট বালি ফেলা হয়েছে। বালির ক্রয় মূল্য প্রতি ঘনফুট ৫ টাকা। মোট ব্যয় ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। বাকি টাকার কোন হদিস নেই। উপ-পরিচালক নিজেই ওই টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রচার আছে। সীমানা প্রাচীর উর্দ্ধমুখী করণে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। ইটের গাঁথুনি দিয়ে উর্দ্ধমুখী করণ করার কথা সেখানে খুলনা শেখপাড়া থেকে পুরাতন কিছু চিকন লোহার ফ্ল্যাটবার দেয়ালের উপরে দিয়ে নি¤œমানের তারকাটা ঘেরা দেয়া হয়েছে। ২২-২৩ অর্থ বছরে উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাসের নিজ অফিস কক্ষের ফ্লোর এবং ওয়ালটাইলসের জন্য বরাদ্ধ টাকা ভুয়া এমবি দেখিয়ে ঐ বরাদ্ধেও অর্থ আত্মসাত করেন ।
এলাকাবাসী জানায়, হর্টিকালচারের নিরাপত্তার জন্য যে তারকাটা দেওয়া হয়েছে তা খুব নি¤œমানের। যা প্রটেকশন জন্য ব্যবহার করা আর না করা সমান কথা। কাজের সাইডে গিয়ে কখনও ঠিকাদার বা তার কোন কর্মচারী দেখা মিলেনি । উপ-পরিচালক তার নিজের লোক দিয়ে কাজ করিয়েছে। সীমানা প্রাচীরে তার কাটার ঘেরা দিতে ১ জন মিস্ত্রী ও ১ জন হেলপার কাজ করেছ প্রতিদিন লেবার মিস্ত্রিকে ১ হাজার ৫ শত টাকা করে দিয়ে ১মাস ব্যাপি কাজ করেছেন। যার খরচ ৪৫ হাজার টাকা। মালামাল ক্রয় খরচ ৫০হাজার টাকা। অফিসের সূত্র থেকে জানা যায়, সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে দেয়ালের তারকাটা দিয়ে ঘেরা দিতে। অফিস মেরামত সামান্য কিছু টাকা দিয়ে রং করে অফিস মেরামত করা হয়েছে। বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে। ভার্মি কম্পোষ্ট সেটটি নির্মানে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ভার্মি কম্পোস্ট সেট নির্মানে মাত্র ৫ হাজার টাকার পুরাতন লোহার অ্যাঙ্গেল ক্রয় করা হয়েছে। অল্প কিছু ইট গাঁথুনি করা হয়েছে। সেখানে উপরের চালে ব্যবহার করা হয়েছে পূর্বের পুরাতন চালের অ্যাঙ্গেল। আকবর হোসেন একজন নিয়মিত গার্ডেন শ্রমিক। তাকে দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সেট নির্মাণে হেলপার এর কাজ করানো হয়। দুর্নীতির আখড়ায়ে পরিণত হয়েছে খুলনার দৌলতপুরের হর্টিকালচার সেন্টারটি।
হর্টিকালচার সেন্টার সূত্রে জানা যায়, বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্প (ণজঋচ) কোড নং -১৪৩ ০২ ২২৪০৬৮৬০০ জুন ২০২৩ মাসের অর্থ বরাদ্ধের বিবরণীতে দেখা যায়, সরবরাহ ও সেবা খাতে ক্রয় সংক্রান্ত বরাদ্ধ আনা হয়েছে, কীটনাশক ক্রয় প্রদর্শনীতে ১৮হাজার ৭ শত টাকা, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৮শত ৫০ টাকা ও প্রদর্শনীতে সার ৫২ হাজার ৫শত টাকা। এ সমস্ত ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শুধু ভাউচারে টাকার হিসাব রয়েছে কিন্তু হর্টিকালচার সেন্টারে মালামাল আনা হয় না। সারের দোকান থেকে একবস্তা সার বা অনন্য মালামাল ক্রয় করা হলে অলিখিত ভাউচার আনা হয়। সেখানে অনেক শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। প্রবাদ বাক্যের মতো, রাজার গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই। কৃষি প্রশিক্ষণে নামে মাত্র সম্মানী প্রশিক্ষর্থীকে দেয়া হয়। বছরে একটি প্রশিক্ষন দিয়ে খাতা কলমে অধিক প্রশিক্ষণ দেখানো হয়।
সরজমিনে ঘুরে জানা যায়, যে সকল ব্যক্তিদের প্রদর্শনী দেয়া হয় তাদেরকে নামে মাত্র সার ও চারা গাছ দিয়ে থাকেন। সেখানে বড় আকারে বরাদ্ধ দেখানো হয়। প্রদর্শনী বাস্তবায়নকারীদের কোন কীটনাশক দেয়া হয় না, কিন্তু সেখানে বড় আকারের খরচ দেখানো হয়। যে সকল ব্যক্তিদের প্রদর্শনীর জন্য ফলজ ও বনজ গাছ দেয়া হয়েছে তা সঠিক ভাবে উপযুক্ত ব্যক্তিকে দেয়া হয়নি। ট্রেনিং এর নামে বহু অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। প্রকল্পের নামে চলছে লুটপাট। হরটিকালচার সেন্টারে মাদার নারকেল গাছ থেকে কচি ডাব বিক্রি করা নিয়ম নেই। মাদার গাছে যে নারকেল তা থেকে উৎকৃষ্ট মানের নারকেল চারা উৎপাদন করা হবে। কিন্তু বর্তমান উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস তিনি নিয়মিত কচি ডাব বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে বাহির থেকে নি¤œমানের নারকেল চারা ও কলম এনে হর্টিকালচার সেন্টারে রেখে বিক্রি করছেন। যা সাধারণ ক্রেতারা না জেনে কিনে নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। কচি ডাব বিক্রি করে কখনো মানি রিসিভ করা হতো না। সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলার পর থেকে ডাব বিক্রির টাকার ভাউচার দেয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে হর্টিকালচার সেন্টারে নিজস্ব উৎপাদিত চারা ও কলমের সংখ্যা খুবই নগণ্য। তিনি বিভিন্ন অ ল থেকে নি¤œমানের চারা ও কলম কম দামে পিকআপ ভ্যানে করে ক্রয় করে হর্টিকালচার সেন্টারে রেখে বিক্রি করেছেন। প্রকল্পের নামে শ্রমিক খাটানো হলেও সে সকল শ্রমিকদের কাজের বাইরে অন্য কাজ করানো হয়। আম গাছ টপ প্রুনিং এর নামে অসময়ে গাছ কেটে মাদার আম গাছকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এই টপ প্রুনিং চৈত্র বৈশাখ মাসে করার নিয়ম রয়েছে। সেখানে বর্তমান উপ-পরিচালক পৌষ মাসের শুরুতেই টপ প্রুনিং করেছেন। ফলে আম গাছ মরার উপক্রম হয়েছে। ভূমি উন্নয়নে লবণাক্ত বালি দেয়ার ফলে সেখানে কোন নতুন যারা কলম উৎপাদন করা সম্ভব না থাকায় প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যবহার করে হর্টিকালচারের উত্তর পাশে দৌলতপুর মেট্রোপলিটন কৃষি অফিসে ডিএই ভবনের পিছনের দিক থেকে খনন করে মাটি দিয়ে বালু ঢাকা হয়েছে। যা সরজমিনে তদন্ত করলে সঠিক তথ্য ও চিত্র বেরিয়ে আসবে। দৌলতপুর,খালিশপুর থানা ও মহেশ্বরপাশা এলাকার বৃক্ষ প্রেমী আব্দুল বারেক, খন্দকার কামরুল হাসান ও কৃষক আঃ হালিম আকন জানান, এ অ লে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা চারা কলম আমরা সুলভ মুল্যে কিনতে পারতাম। এখন আর পারছি না। দিন দিন আমরা বিভিন্ন ফলোজ ও বনোজ গাছের ভালো মানের চারা ও কলম পাচ্ছি না। যে ধরনের গাছ আমাদের এখান থেকে বলে দেয় সেই চারা লাগানোর পর বড় হলে অন্য ধরনের জাত পাই। নারকেল গাছের চারা আমাদের যে জাত বলে দেয়া হয়। গাছটি বড় হলে তার উল্টো দেখা যায়। বিভিন্ন চারা ও কলম কিনে আমরা প্রতারণার শিকার হচ্ছি। এখন শুধু হর্টিকালচারে আসলে শাকসবজির চারা দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষের নিকট এই প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানাই। এই বিষয়ে প্রকল্প কাজের ব্যাপারে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করা হলে তিনি চাহিদা মত কোন তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। টেন্ডার এর মাধ্যমে করা হয়েছে কিনা তার কোন ডকুমেন্টস বা পত্রিকায় প্রকাশের কোন তথ্য দিতে পারেননি। উপপরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস বাগেরহাটে চাকরিরত অবস্থায় নিজস্ব ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করাতেন। দৌলতপুর হরটিকালচার সেন্টারেও নিজস্ব ঠিকাদার সওকাত চাকলাদার এর লাইসেন্সের নামে কাজ নিয়ে নিজের ইচ্ছামত কাজ করছেন। ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহারের জন্য তাকে কিছু অর্থ কমিশন আকারে দেয়া হচ্ছে। সকল কাজ উপ-পরিচালক নিজস্ব লোক দ্বারা তার ইচ্ছামত করিয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বয়রা পূজা খোলায় বসবাসের জন্য জমি ক্রয় করেছেন। তিনি অফিসের গাড়ি ব্যবহার করে তার বাচ্চাকে স্কুলে আনা নেওয়ার কাজ করেন। তার মেয়াদকালে দৌলতপুর হর্টিকালচারের চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। অভিযোগ থেকে জানা যায়, অতিথীদের ডরমেটরি ভবনে অতিথিরা আসলে সার্ভিস চার্জ হিসেবে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়। অতিথিদের যে ধরনের সেবা প্রদানের নিয়ম রয়েছে তা করা হয় না। ব্যবহারের জন্য টিস্যু, হ্যান্ড ওয়াশ,সাবান ও টায়াল সঠিক ভাবে দেয়া হয় না। সার্ভিস চার্জের টাকা খরচ না করে তিনি ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাৎ করেন। ড্রাইভারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিনি ব্যক্তিগত কাজে ইচ্ছামতো ব্যবহার করেন। চারা ও কলম বিক্রি করার জন্য যে ভাউচার বই ব্যবহার করা হয়। উপ-পরিচালকের তত্ত্বাবধানে ছাপানো নকল ভাউচার বই রয়েছে বলে জানা গেছে। চারা ও কলমের মূল্য তালিকা বেশি লিখে রাখা হয় । পরবর্তীতে ইন্সপেকশন আসার পূর্বেই তিনি পুনরায় সংশোধন করে রাখেন। এ বিষয়ে খুলনার দৌলতপুর হটিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার দাস এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে যে টাকা দিয়েছে আমি সে টাকার কাজ করিয়েছি। ২০২৩ সালের জুন মাসের খরচের বিবরণী যে টাকা আছে তা আমি জানি না, এত টাকা আমার এখানে আসেনি। প্রকল্প অফিসে কথা বলেন। তিনি দাপটের সাথে বলেন, আমার মন্ত্রণালয় লোক রয়েছে। আপনারা লেখালেখি করে আমাকে কিছুই করতে পারবেন না। এ বিয়ষে কথা বলতে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ ডঃ মোঃ মেহেদী মাসুদ বলেন, এ রকম অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। সারা দেশে ৭৪টি হর্টিকালচারে প্রকল্প চলমান। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং টিম রয়েছে। এখনও পর্যন্ত কারো কোনো অনিয়ম শুনিনি। শুনলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

 

আরো সংবাদ